খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে গৌতম বুদ্ধের জন্ম হয়। জীবকে নির্বাণলাভের উপায় উপদেশ করে গেছেন তিনি যা মনুষ্য জীবনের অমূল্য সম্পদ। গৌতম বুদ্ধের পিতা ছিলেন রাজা শুদ্ধোদন, তিনি ছিলেন কপিলা বস্তুর রাজা আর মাতার নাম মায়াদেবী। কপিলা বস্তুর কাছে লুম্বিনি শালকুঞ্জে তাঁর জন্ম হয় । গৌতম’ বুদ্ধের জন্মের সপ্তম দিনে মায়াদেবীর মৃত্যু হয়। তাঁর নাম দেওয়া হয় সিদ্ধার্থ। আক্ষরিক অর্থে বুদ্ধ বলতে একজন জ্ঞানপ্রাপ্ত মানুষকে বোঝায় যেটা পরে তাঁর নামের সাথে সার্থকতা পায়। ষোলো বছর বয়সে তাঁকে সংসারের প্রতি মনোযোগী করার জন্য তাঁর পিতামাতা তাঁকে যশোধরার সাথে বিবাহ জীবনে আবদ্ধ করেন। প্রাচুর্য থাকলেও শান্তি ছিল না তাঁর মনে। একদিন তিনি বেরিয়ে ৪ টি দৃশ্য দেখেন-জরা , ব্যাধি , মৃত্যু ও একজন ধর্মীয় ভিক্ষুক। রাজকুমার সিদ্ধার্থ তাঁর স্ত্রী ও পুত্র রাহুল কে রেখে ২৯ বছর বয়েসে গৃহত্যাগ করেন। সিদ্ধার্থের এই যাত্রাকেই বলা হয় মহানিষ্ক্রমণ । গৃহত্যাগ করবার পর কিছুদিন তিনি বৈশালী ও রাজগৃহে উপযুক্ত শিক্ষকের নিকট শাস্ত্র অধ্যয়নে করার জন্য গমন করেন। প্রথমে আলারা নামক একজন সন্ন্যাসীর কাছে যান কিন্তু তার কাছে সঠিক উত্তর না পেয়ে আরো অন্যান্য সন্ন্যাসীর কাছে অধ্যায়ন করার চেষ্টা করেন কিন্তু জগতের রহস্য সম্পর্কে তিনি জ্ঞান অর্জন করতে পারলেন না। এরপর তিনি পাঁচজন সন্ন্যাসীর সাথে যোগ দিয়ে চরম কৃচ্ছ সাধন করেন ছয় বছর। অবশেষে মগধের উরুবিল্ব নামক স্থানে ধ্যানে নিমগ্ন হন এবং এই স্থানেই একদিন তিনি বােধি বা দিব্যজ্ঞান লাভ করেন। এরপর তিনি ‘বুদ্ধ’ বা তথাগত নামে পরিচিত হন। এরপর প্রায় ৪৫ বছর মগধ কৌশল প্রভৃতি পূর্ব ভারতের বিভিন্ন স্থানে ধর্মপ্রচার করেন।
তিনি তাঁর জ্ঞান প্রচার করার জন্য বারানসির কাছে সারনাথে আসেন এবং পাঁচজন শিষ্যকে প্রথম ধর্মশিক্ষা প্রদান করেন তাঁর ৫ জন শিষ্য হলেন কৌন্ডিন্য, ভদ্রিক, অশ্মজিৎ, বাষ্প ও মহানাম। তারপরে তিনি রাজ গৃহে আসেন এবং মগধ রাজ বিম্বিসার ও অজাতশত্রু, কোশলরাজ প্রসেনজিৎ ও তাঁর স্ত্রী মল্লিকা, অনাথপিন্ডক, উপালি, আম্রপালি প্রমুখ তাঁর ই ধর্মমত প্রসারে বিশেষ সহায়ক হয়। ৮০ বছর বয়সে ৪৮৬ খ্রিস্টপূর্বে কুশিনগরে তিনি দেহত্যাগ করেন । খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দী থেকে বাংলায় পাল যুগের শেষ পর্যন্ত বৌদ্ধ ধর্মের বিস্তার হয় । সম্রাট অশোক বৌদ্ধ ধর্মকে বিশ্বধর্মে পরিণত বিশেষ মর্যাদা দেন । এখনও চীন, কোরিয়া, জাপান, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোচিন প্রভৃতি দেশে বৌদ্ধ ধৰ্ম বিশেষ ভাবে প্রসার পায়।
বুদ্ধের দর্শনের প্রধান অংশ হচ্ছে দুঃখের কারণ এবং তা নিরসনের উপায়। বৌদ্ধমতে সর্বপ্রকার বন্ধন থেকে মুক্তিই হচ্ছে প্রধান লক্ষ্য একে নির্বাণ বলা হয়। নির্বাণ শব্দের আক্ষরিক অর্থ নিভে যাওয়া, বিলুপ্তি, বিলয়, অবসান। বুদ্ধের চারটি উপদেশ যা আর্যসত্য বা চতুরার্য সত্য নামে পরিচিত। বলা হচ্ছে দুঃখ একটি বাস্তবতা – যা বুদ্ধের আগেও সবারই জানার কথা। এই দুঃখের কারণ হচ্ছে কামনা-বাসনা-বন্ধন।গৌতম বুদ্ধ চারটি সত্য উপলব্ধি করেন।
(১) সংসারে দুঃখকষ্ট রয়েছে
(২)এই দুঃখকষ্টের কারণও আছে
(৩)মানুষের দুঃখকষ্ট নিরােধের উপায় হল তৃতীয় সত্য
(৪)দুঃখকষ্ট অবসান করার সত্যপথ জানতে হবে।
ত্রিপিটক হচ্ছে বৌদ্ধ ধর্মীয় পালিগ্রন্থের নাম। খ্রীষ্টপূর্ব তৃতীয় শতকে সম্রাট অশোকের রাজত্বকালে ত্রিপিটক পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ হিসাবে স্বীকৃত হয়। এই গ্রন্থের গ্রন্থনের কাজ শুরু হয়েছিল বুদ্ধের নির্বানের তিন মাস পর অর্থাৎ খ্রীষ্টপূর্ব ৫৪৩ অব্দে এবং সমাপ্তি ঘটে খ্রীষ্টপূর্ব প্রায় ২৩৬ অব্দে।
গৌতম বুদ্ধ অষ্টপন্থা মার্গের নির্দেশ দিয়েছেন
যেমন (১) সৎ বাক্য ,(২) সৎ কার্য, (৩)সৎ জীবন, (৪)সৎ চেষ্টা, (৫)সৎ চেতনা, (৬)সৎ চিন্তা, (৭)সৎ সংকল্প এবং (৮) সৎ দর্শন। এই আটটি পন্থাই নির্বাণ লাভের চরম পথ। এগুলির দ্বারাই মানুষের মনে যথার্থ শান্তি আসতে পারে। তাঁর শিক্ষাগুলি প্রথম দিকে মুখে মুখে প্রচলিত হলেও বুদ্ধের মৃত্যুর প্রায় চারশো বছর পর এগুলি লিপিবদ্ধ করা হয়।
তথ্য ও ছবি সংগৃহিত