চাণক্য ছিলেন প্রাচীন ভারতীয় দার্শনিক, শিক্ষক ও রাজ-উপদেষ্টা। খ্রিষ্টপূর্ব ৩৭০-২৮৩ অব্দের মধ্যে তাঁর জীবন ধরা হয়। তাঁর জন্মস্থান চানকা থেকে তাঁর নাম চানক্য হয়। পিতা মাতা নাম দেন বিষ্ণুগুপ্ত , জন্ম হয়েছিল কূটিলা গোত্রে সেইজন্য তিনি ছদ্মনাম নেন কৌটিল্য। প্রাচীন তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি ও রাষ্ট্রনীতির অধ্যাপক ছিলেন। তিনি সাহিত্য, যুদ্ধশাস্ত্র, চিকিৎসাবিজ্ঞান এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানও সমান পণ্ডিত ছিলেন। সেইসময় পাটালিপুত্রের রাজা ছিলেন নন্দরাজ ধনানন্দ। ধনানন্দের সৎভাই ছিলেন চন্দ্রগুপ্ত, পিতার মৃত্যুর পর সৎভাই চন্দ্রগুপ্তকে রাজ্য থেকে তাড়িয়ে দেন। চন্দ্রগুপ্ত যখন জঙ্গলে নির্বাসিত জীবন যাপন করছিলেন, তখন চাণক্যের সাথে তার সাক্ষাত হয়। চাণক্যের সহযোগিতায় চন্দ্রগুপ্ত ক্রমে একটি শক্তিশালী সেনাবাহিনী গড়ে তোলেন এবং গুরু চাণক্যের সুনিপুণ পরিকল্পনা নিয়ে তিনি ধনানন্দকে পরাজিত করে মগধের সিংহাসন দখল করেন। এবং পণ্ডিত চাণক্যকে করেন তার রাজ্যের প্রধানমন্ত্রী। এই ভাবেই মৌর্য সাম্রাজ্যের স্থাপন করতে সাহায্য করেন চাণক্য। রাজা চন্দ্রগুপ্তের জীবনে চাণক্য ছিলেন দার্শনিক, গুরু এবং অভিভাবক।
রাজ্য পরিচালনার পরামর্শদানের পাশাপাশি ভক্তদেরকে নৈতিক ও আর্থ-সামাজিক বিষয়েও চাণক্য জ্ঞানদান করতেন। চাণক্যের অর্থবিষয়ক জ্ঞানের সংকলন হচ্ছে অর্থশাস্ত্র, যা ’চাণক্যের অর্থশাস্ত্র’ বা কৌটিল্য অর্থশাস্ত্র’ নামে পরিচিত একটি কালজয়ী গ্রন্থ। দু’হাজারেরও বেশি বছরের পর এসেও চানক্য নীতি শ্লোকগুলো এখনো যে গুরুত্বহীন হয়ে যায়নি, এখানে ধর্ম, দর্শন, নীতিশাস্ত্র, সামাজিক আচরণ ও রাজনীতির ক্ষেত্রে চানক্যের দার্শনিক চিন্তার পরিচয় পাই। চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের মোট চব্বিশ বছরের শাসনকাল ছিল এবং তাঁর পরও দ্বিতীয় পুরুষ বিন্দুসারা’র জনপ্রিয়তা একই রকম ছিল । তারও পরে এই মৌর্য বংশের তৃতীয় শাসক সম্রাট অশোকের শাসনকাল সমান ভাবে প্রভাবিত ছিল এই নীতি কে ঘিরে। ২৮৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এই মহান দার্শনিক এবং রাজনীতিবিদের মৃত্যু হয়।
চাণক্যের কিছু বাণী :
-“মনের বাসনাকে দূরীভূত করা উচিত নয়। এই বাসনাগুলোকে গানের গুঞ্জনের মতো কাজে লাগানো উচিত।”
-“যারা পরিশ্রমী, তাদের জন্যে কোনকিছু হাসিল করা অসাধ্য কিছু নয়। শিক্ষিত কোন ব্যক্তির জন্যে কোন দেশই বিদেশ নয়। মিষ্টভাষীদের কোন শত্রু নেই।”
-অবৈধ উপায়ে অর্থ রোজগার করলেও তা হাতে থাকবে না
-জ্ঞান হল মানুষের সেরা সম্পদ এবং জ্ঞানী ব্যক্তির কদর সর্বত্র। জ্ঞানের জোরে মানুষ এই পৃথিবীর -সব কিছু অর্জন করতে পারে, তবে কখনও জ্ঞানের অহংকারে অন্ধ হওয়া ঠিক বিষয় নয়।
-বিশেষে সততা মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। বেশি সৎ হতে গিয়ে নিজেদের বিপদ ডেকে আনি। তাই কিছুটা কৌশলী হতে হবে। সততা মহৎ গুন তাই সৎ থাকা ভালো কিন্তু বোকা নয়। কেউ যেন -সততার সুযোগ নিয়ে তোমায় বোকা বানিয়ে চলে না যায়।
-নিজের গোপন বিষয় অন্যের জনসমক্ষে উঠে এলে অন্যের কাছে উপহাসের পাত্র হতে হয়। তাই -নিজের গোপন বিষয় নিজের মধ্যে রাখা ভালো।
-নিজের দুর্বলতা আভাস পেয়ে ঠকাতে থাকবে, অন্যের সামনে, ছোটো করার চেষ্টা করবে। তাই -নিজের দুর্বলতা কখনও অন্যের সামনে প্রকাশ করো না।
-জীবনে বিপদ যখন তখন আসতে পারে। সেই কথা মাথায় রেখে প্রত্যেক মানুষেরই অর্থ সঞ্চয় করে রাখা উচিত।
-ঋণ, অগ্নি ও ব্যাধির শেষ রাখতে নেই, কারণ তারা আবার বেড়ে যেতে পারে।
-গুণবানকে আশ্রয় দিলে নির্গুণও গুণী হয়।
-“মনের বাসনাকে দূরীভূত করা উচিত নয়। এই বাসনাগুলোকে গানের গুঞ্জনের মতো কাজে লাগানো উচিত।”
-“যারা পরিশ্রমী, তাদের জন্যে কোনকিছু হাসিল করা অসাধ্য কিছু নয়।
-শিক্ষিত কোন ব্যক্তির জন্যে কোন দেশই বিদেশ নয়।
-মিষ্টভাষীদের কোন শত্রু নেই।”
-অধমেরা ধন চায়, মধ্যমেরা ধন ও মান চায়। উত্তমেরা শুধু মান চায়। মানই মহতের ধন।
তথ্য ও ছবি সংগৃহীত